অপরাধীদের নাটের গুরু দস্যুপুলন দেবীসহ তার শীর্ষরা এখন কোথায়?
:: এম.আর. মাহমুদ ::
প্রবীণ একজন আওয়ামীলীগ নেতার বস্ত্র হরণ দেখে পুরো জেলায় তোলপাড় চলছে। ঘটনাস্থল চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ছয়কুড়িটিক্যা পাড়ায়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতার নাম নুরুল আলম। তার ১০ একর বিশিষ্ট একটি চিংড়িঘের রয়েছে। ঘেরটি ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের বিতর্কিত এক মহিলা জনপ্রতিনিধিকে লাগিয়ত করেছিল। চুক্তি মোতাবেক টাকাগুলো না পাওয়ায় ঘের মালিক প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আলম ওই বিতর্কিত মহিলা মেম্বারকে ঘেরটি পুনরায় লাগিয়ত না করায় তার লালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে নুরুল আলমকে প্রকাশ্যে বস্ত্র হরণপূর্বক শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়লে হয়তো কারো টনক নড়ত না। বস্ত্র হরণ ও শারীরিক লাঞ্ছনার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ায় সারাদেশে তোলপাড় চলছে।
পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যে এ ঘটনার ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে আসামী করে এক মামলা দায়ের করেছে। অপেক্ষাকৃত দূর্বল ৩ জন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। বাকীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলার মূল আসামী ওই এলাকার মনির উল্লাহর পুত্র আনছার উদ্দিন মহিলা মেম্বার (ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান) আরজ খাতুন এখনো পুলিশের জালে আটকা পড়েনি। তবে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করার জন্য পুরো জেলায় চষে বেড়াচ্ছে। এদিকে একটি মহল রহস্যজনক ভাবে এ মামলার প্রধান আসামী আনছার উদ্দিন পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছে। অথচ বিষয়টি শতভাগ ভূঁয়া। এর পিছনে কোন রহস্য লুকায়িত আছে। প্রবীণ আওয়ামীলীগ নুরুল আলমের বস্ত্র হরণের দৃশ্য দেখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী ধ্র“পদীর বস্ত্র হরণের ঘটনাটি বার বার মনে পড়ে। ধ্র“পদী বস্ত্র হরণের দৃশ্যটি না দেখলেও শুনেছি পড়েছি। ধ্র“পদী ছিল সতী নারী। তার সতিত্ব নষ্ট করার জন্য বস্ত্র হরণ করতে চেয়েছিল লম্পটেরা। কিন্তু পারেনি। ধ্র“পদীর শাড়ীটি হয়তো ১২ হাত লম্বা ছিল। লম্পটেরা বস্ত্র হরণের জন্য যতই টেনেছে, ধ্র“পদীর শাড়ীর দৈর্ঘ্য ততই বেড়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে এটা ঈশ্বরেরই লীলা খেলা। কিন্তু ঢেমুশিয়ার প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আলমের ক্ষেত্রে তা হয়েছে উল্টো। কারণ তিনি কোন মহামানব নয়। তার লুঙ্গির দৈর্ঘ্য ছিল ৫ হাত। তাই সহজেই বস্ত্র হরণ করতে সমস্যা হয়নি। নুরুল আলমের জন্মদিনের অবয়ব দেখেছে আমজনতা। বিষয়টি নিয়ে সব মহলেই নিন্দা জানিয়েছেন। আইনগত প্রক্রিয়াও পুলিশ শুরু করেছে। হয়তো এ দূর্বৃত্তদের শাস্তি হবে।
আওয়ামীলীগ প্রাচীনতম একটি রাজনৈতিক দল। যে দলের কর্ণধার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে এ দলেই ক্ষমতায় আছে। দলে এত আকাল চলছে না যে ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের মত একটি ইউনিয়নে আনছার উদ্দিন, বদিউল আলম ও তাদের গড মাদার আরজ খাতুনকে যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের কমিটিতে স্থান দেয়ার। তারপরও কেন দিয়েছে এটা শাসকদলের নেতারাই ভাল জানে। না বললে হয়না, বহু বিতর্কিত মহিলা মেম্বার আরজ খাতুন অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারা ভোগ করেছে। এমনকি তার একটি সন্তান কারাগারেই জন্ম নিয়েছে। তারপরও সে এ যুগের জনপ্রতিনিধি। এমনকি ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান। তার কোমরে এত শক্তি আসার পিছনে নিশ্চয় কারো আশীর্বাদ রয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিমত। আরজ খাতুনের গুণধর পুত্রগুলো ডাকাতি, ছিনতাই, দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ নানা অপকর্মে জড়িত।
অভিযোগ রয়েছে ইলিশিয়া বাজার থেকে ঢেমুশিয়া পর্যন্ত যেতে কোন ভদ্র লোক মোবাইল, নগদ টাকা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে বাড়িতে ফেরার নজির খুব কমেই আছে। তারপরও ওই এলাকার লোকজন হাঁটু ভাঙ্গা মুরগীর মত শিয়ালের কাছে অসহায় পড়লেও “কহনো যাচ্ছে না, সহনো যাচ্ছে না।” মূলত ঢেমুশিয়া যেন মগের মুল্লুক। এখানে কোন অভিভাবক নেই। অভিভাবক থাকলেও দস্যুপুলন দেবীর বাহিনীর কাছে জিম্মি। কি জানি প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আলমের বস্ত্র হরণের মাধ্যমে এ তস্কর বাহিনীর অপকর্মের অবসান ঘটবে বলে বেশিরভাগ মানুষ আশাবাদী। অবশ্যই এ ঘটনার পর উপজেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে আনছার উদ্দিনকে চিরতরে বহিস্কার করেছে।
লেখক : এম আর মাহমুদ, সভাপতি: চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব ও চকরিয়া প্রতিনিধি: দৈনিক সমকাল
পাঠকের মতামত: